আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) রায় দিয়েছে যে, মিয়ানমারকে নিপীড়িত মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। গণহত্যা পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। তবে আইসিজে দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে আদেশ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, আদালতে রোহিঙ্গা নির্যাতনের ‘বিকৃত চিত্র’ উপস্থাপন করা হয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিশন রাখাইনে গণহত্যার কোনো প্রমাণ পায়নি। তবে সেখানে যুদ্ধাপরাধ হয়েছে, যা তদন্ত করা হচ্ছে এবং মিয়ানমারের ফৌজাদারি বিচার ব্যবস্থায় এর বিচার হবে। মানবাধিকার কর্মীদের নিন্দার কারণে মিয়ানমারের সঙ্গে কিছু দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব পড়ছে বলেও এতে অভিযোগ করা হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মানবাধিকার সংস্থাগুলো তাদের সঙ্গে কিছু দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নষ্ট করার চেষ্টা করছে। এ কারণে মিয়ানমারের টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

গতকাল মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার অন্তর্বর্তীকালীন রায় ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক আদালত।

রায়ে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধন চালিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং দেশটিতে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর এখনো চলছে নিপীড়ন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে মিয়ানমার সরকার। এ সময় মিয়ানমারের প্রতি তাদের সুরক্ষা দেওয়ারও আদেশ দেন আইসিজের বিচারক।

বিচারক অভিযোগ করে বলেন, মামলায় আদালতকে যথাযথ সহযোগিতা করেনি মিয়ানমার। এ সময় মামলা বাতিলের জন্য মিয়ানমার যে আবেদন করেছে সেটিও খারিজ করে দেন বিচারক।

বিচারক আব্দুল কাওয়াই আহমেদ ইউসুফ জানান, এই মামলা নিয়ে মিয়ানমার যে আপত্তি করেছে সেটি গ্রহণযোগ্য নয়।

এ ছাড়া সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেন কোনো ধরনের হত্যাকাণ্ডে না জড়ায় সেটি নিশ্চিত করতে মিয়ানমার সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক আদালত।

তা ছাড়া আদালত অন্তর্বর্তীকালীন রায়ের অগ্রগতি সম্পর্কে ৪ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে মিয়ানমারকে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জন্য কী করা হয়েছে-৬ মাস পর পর তা জানাতেও আদেশ দেন আদালত।

এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার করা মামলার শুনানি শুরু হয়। এই শুনানি চলে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ৩ দিনের ওই শুনানিতে উভয় পক্ষ তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিশাল সামরিক অভিযান চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। এতে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা ওই রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।