আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, ‘আপনারা দেখেছেন কীভাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবরা ভোটকেন্দ্র দখলের নির্দেশনা দিয়েছেন।

দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তারেক রহমান ভিডিওবার্তার মাধ্যমে নাশকতার নির্দেশনা দিয়েছেন। তারেকের বক্তৃতায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের পরিকল্পনা ও সন্ত্রাস সৃষ্টির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি সংঘবদ্ধভাবে গেরিলা কায়দায় ভোটকেন্দ্র দখলের হুমকি দিয়েছেন। একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট উৎসবকে তিনি বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন।’

শুক্রবার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

সারা দেশে নৌকার প্রার্থীদের ওপর হামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে নানক বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্ট নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী গতকাল সিলেটে কাওসার আহমেদকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। চারজনকে আহত করা হয়েছে। আটটি আওয়ামী লীগ অফিসে ও গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে। চারটি স্থানে বোমা হামলা করা হয়েছে। গতকাল দিনাজপুরে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. মাহবুবুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করেছে। তার হাতের দুটো আঙুল কেটে ফেলা হয়েছে। আজ (শুক্রবার) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় আহত ডাক্তার মাহবুবুল ইসলামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়েছে।’

‘এখন পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা ছয়জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। তাদের হামলায় ৪শ’ ৪৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। ১৭৮টি আওয়ামী লীগ অফিস, গাড়িবহর ও নির্বাচনি কেন্দ্র ভাঙচুর করা হয়েছে। ৫৮টি বোমা হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। তারা ৮৮টি অফিস ও যানবাহনে আগুন দিয়েছে। সারা দেশে ৫৪টি জেলার ১৭০টি আসনে বিএনপি-জামায়াত এ ধরনের সহিংসতা ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে। আমরা এই বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানাই।’

সেনাবাহিনীকে নিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে নানক বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্ট নেতারা আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে লাগাতার মিথ্যাচার চালাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সংবিধান ও আইন মোতাবেক সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩৮৯টি উপজেলায় সেনাবাহিনী এবং ১৮টি উপজেলায় নৌবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে। সেনাবাহিনী নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যেকোনও দায়িত্ব পালন করবে। সেনাবাহিনী মোতায়েন করায় নাশকতার পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় বিএনপি নেতারা এখন সেনাবাহিনীকে নিয়ে নানা ধরনের উসকানিমূলক মন্তব্য করতে শুরু করেছেন। একটি পেশাদার সুশৃঙ্খল দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নিয়ে এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আপত্তিকর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

এ সময় নানক বলেন, ‘পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ব্যাপক সহিংসতা ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব রটিয়ে নির্বাচনের আগে ভীতি সঞ্চারের চক্রান্ত চালাচ্ছে। ভুয়া ব্যালট পেপার ছাপিয়ে ও নকল বুথ বানিয়ে সিল মারা নকল ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর নীলনকশা করছে।’

পর্যবেক্ষক হিসেবে বিএনপি-জামায়াতের হাজার হাজার ক্যাডার নামানো হচ্ছে এমন অভিযোগ করে নানক বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের মদতপুষ্ট একাধিক সংগঠনকে পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে হাজার হাজার দলীয় নেতাকর্মীকে পর্যবেক্ষক হিসেবে মাঠে নামানো হচ্ছে বলে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের সংস্থা খান ফাউন্ডেশন, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমানের ডেমোক্রেসি ওয়াচ, তারেক রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত বগুড়াভিত্তিক লাইটহাউস, বিতর্কিত আইনজীবী আদিলুর রহমানের বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিষদ এবং বিএনপি- জামায়াত-ঐক্যফ্রন্ট কোটি টাকা খরচ করে বিদেশে লবিস্ট ফার্ম এনফ্রেল নামের একটি সংস্থাকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এসব সংস্থার নামে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার বাহিনীর হাজার হাজার সদস্যকে পর্যবেক্ষক হিসেবে মাঠে নামানো হচ্ছে। এ ধরনের দলীয় প্রতিষ্ঠানের নামে সাড়ে ছয় হাজার পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়ায় নির্বাচনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

‘তারা দলের পক্ষে কাজ করে নির্বাচনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ বিনষ্ট করতে তৎপরতা চালাতে পারে। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন বিতর্কিত পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ এবং ইউরোপের আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য প্রণীত কোড অফ কন্ডাক্ট বিরোধী। আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ ধরনের পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিষ্ঠানকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দিতে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজ করলে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালাবে। তাই তাদের বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নানক বলেন, ‘বিএনপি জামায়াত শুধু ভোটকেন্দ্র দখলের চেষ্টা করছে না। তারা আওয়ামী লীগের ব্যাচ, নৌকার ব্যাচ, নৌকার মনোগ্রাম সংবলিত শীতকালীন মাফলার ও গেঞ্জি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে সেই দায়দায়িত্ব আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে অপপ্রচারের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি এবং দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’