ঢাকা-১৪ আসনের এমপি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসলামুল হক গত ৪ এপ্রিল মারা যান। ইতিমধ্যে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

তবে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ইতোমধ্যে দৌড় ঝাপ শুরু করে দিয়েছেন। তফসিল ঘোষণার আগেই অনেকে নিজেকে ঢাকা-১৪ আসনের উপনির্বাচনে দলের যোগ্য প্রার্থী মনে করে প্রচারণা করতে দেখা গেছে। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে। প্রতিদিনই সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা লম্বা হচ্ছে।

নৌকার প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় এগিয়ে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী। রাজপথে পরীক্ষিত এই নেতা তার এলাকায় মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে পরিচিত। শুধু করোনায় নয়, সবসময় মানুষের পাশে থেকে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সকল নির্দেশ সঠিকভাবে বাস্তবায়নে তার জুড়ি মেলা ভার।

তার সম্পর্কে বলতে গিয়ে স্থানীয় প্রবীণ এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, একটা মানুষ, কখনো নিজ হাতে ড্রেনের ময়লা পরিষ্কার করেন, আবার সেই হাতের তর্জনী দিয়েই হাজার হাজার নেতাকর্মীকে উজ্জীবিত করেন। কখনো ইফতার নিয়ে ছুটে চলেন অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পাশে, আবার কখনো মধ্য রাতে সেহরির জন্য খাবারের বাটি হাতে চষে বেড়ান নগরীর অলিগলি। এই আসনের মানুষের মাঝে অনেক পরিচিত মুখ তিনি।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানায়, মহামারি করোনাভাইরাসে কোনো রকম ভয়ভীতি না হয়ে জীবন বাজি রেখে গরীব দুঃখী মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ায় এলাকাবাসীর কাছে তিনি প্রশংসিতও হচ্ছেন। 

প্রয়াত আসলামুল হকের স্ত্রী মাকসুদা হক তার স্বামীর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য উপনির্বাচনে নৌকার মাঝি হতে চান। দলের একটি অংশ তার পক্ষে নেমেছেন। আসলামুল হকের বড় মেয়ে মাইশা হক তার মায়ের পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন।

জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য আসলামুলের বড় ভাই মফিজুল হক বেবুও চাইছেন এ আসনে নির্বাচন করতে। তবে তিনি আওয়ামী লীগ না করলেও আসলামুলের কারণেই এলাকায় তার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পোশাক প্রস্তুতকারক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি এস এম মান্নান কচিও এই উপনির্বাচনে অন্যতম শক্তিশালী সম্ভাব্য প্রার্থী। এই আসন থেকেই তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয় এবং এই আসন থেকে এর আগেও তিনি মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এ কারণে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী প্রতিদিনই তার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছ।

ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি, সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি সাবিনা আক্তার তুহিন হচ্ছেন আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী । সাবেক এমপি হওয়ায় এলাকার স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সাথে তার পূর্বে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া আছে। 

আবার স্থানীয় নেতাকর্মীদের একাংশ যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে ঢাকা-১৪ আসনের নৌকার মাঝি হিসেবে দেখতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। নেতাকর্মীদের অনুরোধে তিনি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেন বলে এই আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনো তেমন একটা প্রচারণা শুরু করেননি তিনি। দলের হাইকমান্ডের সাথে আলোচনা করেই তিনি সিদ্ধান্ত নিবেন।

আওয়ামী লীগের অন্যতম সম্ভাব্য প্রার্থী ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দারুসসালাম থানা আওয়ামী লীগেরও সভাপতি এ বি এম মাজহারুল আনাম। এর আগেও কয়েকবার তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। সাংগঠনিকভাবে ও তার বেশ শক্ত অবস্থান রয়েছেন। এবার তিনি কোনভাবেই হাত ছাড়া করতে চান না নৌকার টিকিট।

শাহ আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আগা খান মিন্টুও পরোক্ষভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নেতাকর্মীদের চাওয়া পাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে হাইকমান্ড তাকে নির্বাচনে লড়তে সবুজ সংকেত দিলে তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। তবে হাইকমান্ড যাকে মনোনয়ন দেবেন, তার পক্ষেই তিনি কাজ করবেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার দেওয়ান আবদুল মান্নানও সম্ভাব্য প্রার্থীদের একজন। এমপি হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই তিনি কাজ করছেন। ফেসবুকের মাধ্যমে তিনি প্রচারণাও শুরু করেছেন।

অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজলও ঢাকা-১৪ আসনের উপ-নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হতে চান। এর আগে তিনি ঢাকার একটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ছিলেন।নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টার শেয়ার করার মাধ্যমে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি । 

পোস্টে তিনি লিখেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে ঢাকা-১৪ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করেন, আমার এলাকার মানুষের সেবা করার সুযোগ দেন, তাহলে আমি নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী।



উল্লেখ্য, রাজধানীর ঢাকার শাহ আলী ও দারুসসালাম থানা, বৃহত্তর মিরপুরের অর্ধেক, রূপনগরের আংশিক, সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৪ আসন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড এই আসনের আওতাধীন। জাতীয়ভাবেই আসনটির গুরুত্ব অনেক। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসলামুল হক আসলাম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিএনপি প্রার্থী এসএ খালেককে পরাজিত করেছিলেন। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি নৌকার মাঝি হয়ে সংসদে যান।