ঢাবি প্রতিনিধি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বেগম রোকেয়া হল সংসদ ও হল ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে ২১ লক্ষ টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ এনেছেন হলের কিছু আবাসিক শিক্ষার্থী। নিয়োগ বাণিজ্যে হল প্রাধ্যক্ষের প্রত্যক্ষ মদদও রয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। মঙ্গলবার (০৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

তাদের অভিযোগ, হল সংসদের ভিপি ইসরাত জাহান তন্বী হলের কর্মচারী কামাল উদ্দিনের ছেলে কামরুজ্জামানকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আট লক্ষ টাকা, জিএস সায়মা আক্তার প্রমি হলের মালী বাবুল চৌহানের ছেলে পলাশ চৌহানকে বাগান মালী পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা, রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ডাকসুর কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক বিএম লিপি আখতার এবং সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী দিশা মিলে আলমগীর নামের একজনকে প্রহরী পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আট লক্ষ টাকার লেনদেন করেন।

হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদা এসব ঘটনা সম্পর্কে অবহিত এবং তিনি এই নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত আছেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

 অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা হলেন, রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শ্রবণা শফিক দীপ্তি, সায়েদা আফরিন শাফি, জয়ন্তী রেজা। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি আবু রায়হান খান ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাগিব নাইম উপস্থিত ছিলেন।

হল সংসদের এজিএস ফাল্গুনী তন্বী কোনো ভাগ না পাওয়ায় তার মাধ্যমেই এই তথ্য ফাঁস হয়েছে দাবি করেন অভিযোগকারীরা। হলের এক কর্মচারী ও এজিএস ফাল্গুনীর মধ্যেকার কয়েকটি অডিও কল রেকর্ডের ক্লিপ অভিযোগকারীদের কাছে রয়েছে। এসব অডিও ক্লিপের মধ্যে টাকা লেনদেনের প্রমাণ রয়েছে বলেও দাবি করেন তারা।

উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট শ্রবণা শফিক দীপ্তি তার ফেইসবুক একাউন্টে হলের নিয়োগে লেনদেন বাণিজ্যের অভিযোগ এনে একটি পোস্ট করেন। পোস্টটি আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে হল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে গত সোমবার (০২ সেপ্টেম্বর) অভিযোগকারী দীপ্তিকে নোটিশ পাঠিয়ে মঙ্গলবার (০৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে হল প্রাধ্যক্ষ অফিসে উপস্থিত হয়ে তার বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

দীপ্তির অভিযোগ, মঙ্গলবার দুপুরে বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ডেকে নিয়ে অভিযুক্তরা তাকে হেনস্তা করেন এবং এর ভিডিও ধারণ করেন। অভিযুক্তরা দীপ্তিকে বিভিন্ন কটু কথা বলে মৌখিকভাবে লাঞ্চিত করেন এবং বিভিন্ন হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এর পরিপ্রেক্ষিতে, তদন্তে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ প্রমাণিত হলে হল সংসদ বাতিল করার দাবি জানান তিনি। এছাড়া হল সংসদের ভিপি-জিএস সহ সকল অভিযুক্ত এবং হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি জানান শ্রবণা শফিক দীপ্তি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদাকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে হল সংসদের ভিপি-জিএসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগ অস্বীকার করেন তারা।

এদিকে বিএম লিপি আখতার বলেন, 'দীপ্তি সব সময় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কথা বলে এটা সবাই জানে। সে আমার বিরুদ্ধে, আমার হলের সেক্রেটারির, হল সংসদের ভিপি-জিএসের বিরুদ্ধে এবং প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল। এজন্য আজকে মিটিং ডেকে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। সে বলেছে, চতুর্থ শ্রেণির একজন কর্মচারী তাকে এ বিষয়ে তথ্য দিয়েছে। কোন কর্মচারী নাম জানতে চাইলে সে নাম বলেনি।'

অভিযোগ সত্যতা নিশ্চিততের জন্য দীপ্তিকে প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে বলে জানান লিপি।