ঢাবি প্রতিনিধি: বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার চার মাস না পেরুতেই  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে চার  শিক্ষার্থীকে আবরারের স্টাইলে রাতভর নির্যাতন করেছে ছাত্রলীগ। নির্যাতনের পর আহত শিক্ষার্থীদের হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও পুলিশের মাধ্যমে শাহবাগ থানায় দেওয়া হয়। পরে শিক্ষার্থীদের রাতের বেলায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর জন্য নিয়ে যায় পুলিশ।    

ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানায়, রাত সাড়ে ১১ টায় সন্দেহবশত তারা দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে শিবির করে কিনা সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে আসে।  শিবিরের সাথে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন অভিযোগে তাকে মানসিক চাপ দিতে থাকে। স্বীকার না করায় তাকে মারধর করে। এসময় তার মোবাইলে আরও তিন বন্ধুর সঙ্গে 'যোগাযোগ তালিকায়' নাম থাকায় তাদেরকেও ডেকে গেস্টরুমে আনা হয়। এসময় হল শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ সভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা, হল সংসদের সহ-সভাপতি সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্তসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতারা এসে রড, লাঠি দিয়ে মারধর করে। মারধরে গুরুতর আহত হন তারা।

তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১১ টার দিকে জুহুরুল হক হলের গেস্টরুমে ছাত্রলীগের নিয়মিত গেস্টরুম চলছিল।  তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মুকিম চৌধুরীকে শিবির সন্দেহে গেস্টরুমে ডাকা হয়।  সেখানে হল শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা তাদের অনুসারীদের দিয়ে মুকিমকে প্রথমে মানসিক চাপ দেয়। এতে স্বীকার না করায় তাকে লাঠি, স্টাম্প ও রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করতে থাকে। পরে  তার ফোনের চ্যাটলিস্ট দেখে রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সানওয়ার হোসেনকে গেস্টরুমে আনা হয়। সেখানে তাকেও বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগের নেতারা।  মারধর সহ্য করতে না পেরে তারা উভয়েই মেঝেতে বসে ও শুয়ে পড়ে। এর একটু পর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দীন ও একই বর্ষের  আরবী বিভাগের শিক্ষার্থী আফসার উদ্দীনকে ধরে গেস্টরুমে আনা হয়। সেখানে রাত দুইটা পর্যন্ত তাদের ওপর বিভিন্ন নির্যাতন করতে থাকে ছাত্রলীগ নেতারা।    পরে রাত ২টার পর তাদেরকে প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে পুলিশ তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। 

নির্যাতনের বিষয়ে ছাত্রলীগের নেতারা দাবি করেছে আহত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিবির সংশ্লিষ্ট বই উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তার কোন নাম অথবা প্রমাণ দিতে পারেন নি তারা। এমনকি  শিবির সন্দেহে তাদেরকে গেস্টরুমে ডাকা হলেও তাদের কাছে শিবিরের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ বের করতে পারেনি ছাত্রলীগ। 

ছাত্রলীগের নির্যাতনে আহত মুকিম ও সানওয়ারকে রাত দুইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয় পুলিশ। বর্তমানে      

নির্যাতনের বিষয়ে নির্যাতনকারী হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা বলেন, আমরা তাদেরকে মারধর করেনি।  শুধুমাত্র জিজ্ঞাসা করেছি।  তাদের কাছ থেকে শিবিরের দুইটি বই উদ্ধার করেছি।  

তবে বইয়ের ছবি ও নামের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে আমির হামজা কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি।  আমির হামজার বিরুদ্ধে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাঁদা চেয়ে এক ঔষধ ব্যবসায়ীকে মারধর করলে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এর কিছুদিন পর ছিনতায়ের সাথে জড়িত থাকায় তাকে হল ছাত্রলীগের সব গ্রুপ একত্রিত হয়ে তাকে হল থেকে নামিয়ে দেয়।  পরে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের ছত্রছায়ায় আবার হলে উঠে।  

জুহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে মুখ ফসকে বলে ফেলে,  শালাদের অনেক মেরেছি। কিন্তু একটাও স্বীকার করেনি।  একজনের নামও বলেনি।