গণতন্ত্র দিবসের এক আলোচনা সভায় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের শহীদ নূর হোসেনকে ‘ইয়াবাখোর, ফেন্সিডিলখোর’বলে মন্তব্য করায় বক্তব্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা। 

তার এমন বক্তব্যে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়ে সোমবার প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেয় নূর হোসেনের পরিবার। তার মা মরিয়ম বেগম রাঙ্গাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান।

এ প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি।

মশিউর রহমান রাঙ্গা স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে: গত ১০ নভেম্বর’১৯ তারিখে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয়ের মিলনায়তনে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ঘরোয়াভাবে আয়োজিত গণতন্ত্র দিবসের আলোচনা সভায় আমার কিছু বক্তব্য নিয়ে কোনো কোনো মহল এবং বিশেষ করে নূর হোসেনের পরিবারের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রতি বছর নূর হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে কয়েকটি সংগঠনের আলোচনা, বক্তব্য ও বিবৃতিতে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয় এমনকি তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালিও করা হয়। এর ফলে জাতীয় পার্টির কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সেই প্রেক্ষিতে কর্মীদের উত্তেজনার মধ্যে বক্তব্য প্রদানকালে অনিচ্ছাকৃতভাবে আমার মুখ থেকে নূর হোসেন সম্পর্কে কিছু অযাচিত কথা বেরিয়ে গেছে যা নূর হোসেনের পরিবারের সদস্যদের মনে আঘাত করেছে। এর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও অনুতপ্ত।

‘নূর হোসেনের পরিবারের প্রতি আমাদের প্রয়াত চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু এরশাদও সমব্যথী ছিলেন। অতএব, অসতর্কভাবে বলে ফেলা আমার বক্তব্যে যে আঘাত লেগেছে তার জন্য আমি নূর হোসেনের মায়ের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। একই সাথে আমার যে বক্তব্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে সেসব বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। আমি আশা করি এই বিষয়ে আর কোনো ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকবে না।’

গত ১০ নভেম্বর রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে মহানগর উত্তর শাখার উদ্যোগে আয়োজিত ‘‘গণতন্ত্র দিবস’র এক আলোচনা সভায় দলটির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কাকে হত্যা করলেন? নূর হোসেন কে? নূর হোসেন কে? একটা অ্যাডিকটেড ছেলে। একটা ইয়াবাখোর, ফেন্সিডিলখোর।’’

ওই সভায় রাঙ্গা আরও বলেন, ‘‘নূর হোসেনকে নিয়ে গণতান্ত্রিক দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নাচানাচি করে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির গণতন্ত্রটা হলো এমন, যারা অতি ফেন্সিডিলখোর, ইয়াবাখোর, যারা ক্যাসিনোর ব্যবসা করে, তারাই হলো গণতন্ত্রের সোনার সন্তান। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দেখবেন নূর হোসেন দিবস। সেই নূর হোসেন চত্বর এরশাদ করেছেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্র এরশাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক ছিলেন।’’



১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর সেই সময়ের সামরিক শাসক এরশাদের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলনে রাজধানীর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট এলাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন যুবলীগ নেতা নূর হোসেনসহ নূরুল হুদা বাবু ও ক্ষেতমজুর নেতা আমিনুল হুদা টিটো।

এখন সেই জায়গাটি শহীদ নূর হোসেন স্কয়ার নামে পরিচিত। বুকে-পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক স্বৈরাচার নিপাত যাক’ লিখে মিছিল করা অবস্থায় পুলিশ তাকে গুলি করে হত্যা।

সেই ঘটনার পর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন আরো বেগবান হয়ে ওঠে। তার তিন বছর পর ১৯৯০ সালের শেষ দিকে বিদায় নিতে বাধ্য হন স্বৈরাচার এরশাদ।