নভেল কারোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অর্থনৈতিক প্যাকেজের সুফল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির জেনেও না জানান ভান করছেন বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডের সরকারি বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, “বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেব সংবাদ সম্মেলন করে তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন, এতে মনে হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষনা করেছেন সেটা না পড়ে না বুঝে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। আমরা আশা করেছিলাম, আগের দিনে যেহেতু বিএনপি একটি প্রস্তাবনা দিয়েছেন এবং পরদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি যুগান্তকারী অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষনা করেছেন যেখানে ৭২ হাজার ৭ শত ৫০ কেটি টাকার বাজেট দিয়েছেন।এই অর্থনৈতিক প্যাকেজে বাংলাদেশের জিডিপির ২ দশমিক ৫২ শতাংশ অথচ ভারত যে প্যাকেজ ঘোষনা করেছেন তা ভারতের জিডিপির দশমিক ৮ শতাংশ।


“আমরা আশা করেছিলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষনার পর, তারা সরকারকে ধন্যবাদ জানাবে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তারা ধন্যবাদ জানানোর সংস্কৃতিটাই লালন করে না। সে কারণে বিএনপি এবারও চিরচারিত গতানুগতিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে নি।” 

প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অর্থনৈতিক প্যাকেজের সুফল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জেনেও না জানান ভান করছেন বলে দাবি করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে ব্ক্তব্য রেখেছেন তাতে মনে হয় তিনি না পড়ে না বুঝে তিনি একটি বক্তব্য দিয়ে দিয়েছেন। তিনি জেনেও না জানার ভান করছেন। 

“এই প্যাকেজ ঘোষনার আগে থেকেই সরকার দরিদ্র, খেটে খাওয়া মানুষের জন্য নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন এখানে দরিদ্র মানুষের কোন কথা নেই, এখানে দিনে আনে দিনে খায় এমন মানুষের কোন কথা নেই।এ ধরণের কান্ডজ্ঞানহীণ কথা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন। এই সংবাদ সম্মেলন করার আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জানা উচিৎ ছিল, বিএনপির মত একটি বড় দলের মহাসচিবের মত দায়িত্বে থেকে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে বক্তব্য রাখা।”

করোনাভাইরাসের এই সময়ে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, “সরকারের চলমান বিজিডি, বিজিএফ কার্ডের বাইরেও করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য দরিদ্র মানুষ যাতে বিনামূল্যে খাদ্য পায়,সেজন্যই সরকার ৪৮ হাজার একশত ১৭ মেট্রিকটন চাল ত্রাণ মন্ত্রনালয় থেকে ইতোমধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নগদ বরাদ্দ হিসেবে ১৬ কেটি টাকা দেওয়া হয়েছে। 

“গতকাল যে অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষনা করা হয়েছে সেখানেও ৩০-৪০ লাখ পরিবারকে নগদ সহায়তা দেওয়ার জন্য ৬ শত ৮০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে।এর বাইরেও খাদ্য মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে ২৪ টাকা দামের ওএমএসের চাল দশ টাকা দরে ঢাকাসহ উপজেলা পর‌্যায় পর‌্যন্ত দেওয়া হয়েছে। যাতে দরিদ্র মানুষ এটা কিনতে পারে। এবং এটি কিনে মানুষ যে সরকারকে ধন্যবাদ দিয়েছে সস্থি প্রকাশ করেছে এটা আপনারা বিভিন্ন গণমাধ্যমেই দেখেছেন।” 

“সরকার ৫০ লাখ পরিবারকে গত সাত মাস ধরে প্রতি পরিবারকে ৩০ কেজি করে দশ টাকা দরের চাল বিতরণ করছে। প্রায় আড়াই কোটি মানুষের মাঝে। এই সহায়তা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক এই প্যাকেজে কৃষকের জন্যও প্রনোদনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মৎস পল্ট্রি, তাদের খতি পোষাতেও এই অর্থনৈতিক প্যাকেজে বলা হয়েছে। অথচ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব বলেছেন, এই সমস্ত খাতে কোন বরাদ্ধ দেয়া হয় নাই। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের চোখ এবং কান অন্ধ ও বধিরের মত আচরণ করছে।” 

“স্বাস্থ্য খাতের বিষয় নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম কথা বলেছেন, স্বাস্থ্য খাতে চলতি বাজেটে ২৫ হাজার পাঁচশত আশি দশমিক ৫৬ কেটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্যাকেজ ঘোষনার আগেই যাতে পিপিইসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা , করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। যেগুলো মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হয়ত জেনেও না জানার ভান করছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সারা দেশে সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি পিপিই বিতরণ করেছে।”

বিএনপিকে দোষারোপ করার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী। 

“সরকার নাকি জনগনকে ঘরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে এমন কথাও মিরআ ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২৫শে মার্চ জাতির উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দিয়েছেন সেই ভাষণে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ ঘরেই আছে, ঘরেই অবস্থান করছে। এবং এর পরেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জনগনের জন্য ৩১দফা নির্দেশনা মানার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। জনগণ সেটিও পালন করার অনুষরণ করার চেষ্টা করছে।” 

“সমগ্র দেশের মানুষ যেখানে ঘরে অবস্থান করছে, আমরা দেখতে পেলাম খালেদা জিয়া যেদিন বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে বিশ্ববিদ্যলয়ের প্রিজন সেল থেকে মুক্তি পেলেন তারা বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের সামনে হাজার হাজার মানুষকে জড়ো করলেন, বাড়ির সামনে জমায়েত করলেন। যারা এমন কান্ডজ্ঞানহীন কাজ করেন। যেখানে ২৬শে মার্চের জাতীয় সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে যখন জাতীয় সৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন বাতিল করা  হয়েছে অথচ খালেদা জিয়ার এখানে হাজার হাজার মানুষ জমায়েত করেন নিজেরা ঘরে থাকেন না তারা ঘরে বসে এই ধরণের দোষারোপের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসবেন সেটাই জাতির প্রত্যাশা। অন্ধ এবং বধিরের মত আচরণ না করে জেনে  শুনে পরামর্শ দিতে পারেন।  

“আমি বিএনপিকে অনুরোধ জানাবো করোনা ভাইরাসের এই অবস্থার সময় সবাইকে মিলে মোকাবেলা করতে হবে, এখন একে অপরকে দোষারোপের সময় নয়। একে অপরের হাত ধরে মানুষের পাশে দাড়ানোর সময়।”