আজ ১৫ই আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস। একজন স্বাধীন বাংলার নাগরিক হিসেবে জাতির পিতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। যদিও পিতাকে নিয়ে লেখার যোগ্যতা আমার এখনো হয়নি।

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দেন। রেসকোর্সের জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন,-

“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। ঐতিহাসিক এ ভাষণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে শৃংখল মুক্তির আহ্বান জানিয়ে ঘোষণা করেন,

 “রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্। প্রত্যেকে ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো। যার যা কিছু আছে তাই নিয়েই শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে”।

বঙ্গবন্ধুর এই ''যার যা কিছু আছে তাই নিয়েই শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে'' বাক্যের মধ্যে বাঙ্গালি জাতির স্বাধীনতার পুর্নতা পায়। তার বিশালতা তার কথা ও কর্মের মধ্যে প্রস্ফুটিত হয়েছিল। তিনি ছিলেন মহানায়ক। 

                              

বঙ্গবন্ধুর ডাকে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা বাংলা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙ্গালি জাতির এই জাগরণে ভীত ইয়াহিয়া খান সামরিক আইন জারি করেন, নিষিদ্ধ করেন আওয়ামী লীগকে এবং বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুরকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।

এরপর আসে ২৫ মার্চ, ১৯৭১। রাতের অন্ধকারে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর শকুনের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনারা; শুরু করে অপারেশন সার্চলাইট নামে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড। বৃদ্ধ থেকে কোলের শিশু- কেউ রক্ষা পায়না পাক হায়েনাদের নারকীয়তা থেকে। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। অবশ্য তার আগেই, পাক বাহিনীর অভিযান শুরু হলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং জনগণকে সর্বাত্মক আন্দোলনে সামিল হতে আহ্বান জানান।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়। তিনি পাকিস্তান থেকে ইংল্যান্ডের লন্ডন  ভারতে গমন করেন। সেসময় বাংলাদেশ ভারতের অধিকারে ও নিয়ন্ত্রণে থাকে। দেশে ফেরার পর বঙ্গবন্ধুকে প্রথমে দেশের প্রধানমন্ত্রী  পরে রাষ্ট্রপতি দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়।

পাকিস্তানী শাষনের ঘোর অন্ধকার যুগের ইতিহাসকে যিনি বদলে দিয়েছিলেন ২৪ বছরের সংগ্রামী জীবনের কঠোর তপস্যা দিয়ে যিনি বাঙ্গালিকে আলোর পথ দেখিয়েছিলেন। নতুন বাংলার জাগরনে তার মহত্তর জীবনদর্শ এক তপবীরের মত। জীবনের দশটি বছর কারান্তরালের নির্জন প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন অসীম ধৈর্য আর অপরিসীম সহিষ্ণুতা নিয়ে।

কোনরূপ অন্যায়ের কাছে যিনি নতি স্বীকার করেন নাই- বাঙালীর ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ বাঙ্গালী জাতি যদি বঙ্গবন্ধু চর্চা করে তবে বাঙালীর গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের পূণ্যার্জনে ভবিষ্যৎ পূণ্যময় হয়ে আগামী জীবন সাফল্যমণ্ডিত হবে সুনিশ্চিত।

একজন বঙ্গবন্ধু ছিলেন সারা বাঙ্গালি জাতির তার রাজনৈতিক দর্শন ছিল গরিব মানুষের সেবা। তিনি দুঃখী দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। তিনি দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মুখে খাদ্য তুলে দিতে চেয়েছেন। অঙ্গের বস্ত্র দিতে চেয়েছেন, মাথার ওপর ছাদ দিতে চেয়েছেন। মোট কথা দরিদ্র মানুষের সেবা করাই ছিল তার ব্রত। তাই শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই ছিল তার রাজনৈতিক দর্শন।

সমাজতন্ত্রী না হয়েও সমগ্র বিশ্ব্যবাপী সমাজতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে স্যালুট করে স্বাগত জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, “বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত। শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।” আর বাকশাল কর্মসূচির মূল দর্শন সম্পর্কে বলেছিলেন, “বাকশাল হচ্ছে শোষিতের গণতন্ত্র।” কিন্তু তিনি কখনোই একনায়ক ছিলেন না; আপাদমস্তক গণতন্ত্রী; গণমানুষের একান্ত আপনজন।


ভালোবাসি জাতির পিতা, আপনাকে বিনম্র শ্রদ্ধা।

                                                                   লেখকঃ লায়ন মোঃ ইউসুফ খান-নির্বাহী সম্পাদক, বিডি পলিটিকা।