আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ থেকে বাদ পড়ছেন শীর্ষ নেতা যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী।তাকে ঘিরে আলোচনা সমালোচনার শেষ নেই। ঐতিহ্যবাহী এই যুব সংগঠনের চেয়ারম্যান হওয়ার পর ধরাকে সরাজ্ঞান করেন তিনি। তার অহঙ্কার ও দাম্ভিকতায় দলের দুর্দিনের নেতাকর্মীরা সবসময় থাকতেন তটস্থ। বিশেষ পরিবারের জামাতা হওয়ায় সবাই তাকে করতেন সমীহ। তার দাপটে অনেক অপকর্মের প্রত্যক্ষ সাক্ষীরাও ছিলেন নীরব। আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানের ঘোষণা দেয়ার পর থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।

সম্প্রতি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর এসব সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে আগামীতে আর সংগঠনের নেতৃত্বে থাকতে পারছেন না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

ওমর ফারুকের অপকীর্তি নিয়ে অনেকে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন এমন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বলছেন, ক্যাসিনো, জুয়া, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রকদের গডফাদার ওমর ফারুক ‘দুষ্টের শিরোমণি’। তার মদদে রাজধানীসহ সারাদেশে যুবলীগের কতিপয় নেতাকর্মী বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। যুবলীগের ওয়ার্ড থেকে উপজেলা, জেলা এমনকি কেন্দ্র পর্যন্ত ‘পদবাণিজ্যের’ মাধ্যমে তিনি আয় করেন কোটি কোটি টাকা। এরপর ক্যাসিনো ব্যবসা, ঠিকাদারি, চাঁদাবাজি সবখান থেকেই তিনি ভাগ নিতেন। ব্যাংক হিসাব তলব ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আসার পর সবার ধারণা এবার ওমর ফারুক চৌধুরীর পালা।

২০১২ সালের ১৪ জুলাই যুবলীগের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন ওমর ফারুক। তার পর থেকে হাল ধরে ছিলেন যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী।তবে তিনি এখন অন্তরালে রয়েছেন। গত ১১ অক্টোবর সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সভাতেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর তার ব্যাংক হিসাব তলব ও অনুমতি ছাড়া বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকেই তাকে আর সংগঠনের কোনো কার্যক্রমে দেখা যাচ্ছে না।

সূত্র জানায়, আগামী ২৩ নভেম্বর যুবলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ওই সম্মেলনে তার সভাপতিত্ব করার সম্ভাবনা নেই। সম্মেলন নিয়ে আগামী ২০ অক্টোবর যুবলীগের নেতারা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠকেও যুবলীগের চেয়ারম্যান থাকতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী তাকে ওই বৈঠকে যেতে নিষেধ করেছেন বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠকে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকেরা থাকবেন।

উল্লেখ্য, সরকারের চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট ও তার সহযোগী যুবলীগ নেতা আরমান গ্রেফতারের পর ওমর ফারুক চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় বলে খবর রয়েছে সংবাদ মাধ্যমে। তবে দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞার খবরের পর ওমর ফারুক চৌধুরী একটি গণমাধ্যমকে টেলিফোনে বলেন, আমি দেশ ছেড়ে পালাব কেন? আমি দেশেই আছি, দেশেই থাকব। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। তবে দৃশ্যত অনেকটা আড়ালেই আছেন যুবলীগের দাপুটে এই নেতা।