জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রেকর্ড ৩২২ রান করে মাশরাফিরা ধরেই নিয়েছিলেন জয় নিশ্চিত। কিন্তু বাজে বোলিংয়ের কারণে প্রত্যাশিত জয়ের ম্যাচেও শেষ দিকে পরাজয়ের দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় টাইগাররা। ডেথ ওভারে ব্যাটিং তাণ্ডব চালিয়ে যাওয়া ডোনাল্ড ত্রিপানো শেষ বলে ছক্কা হাঁকাতে না পারায় ৪ রানে জিতে যায় বাংলাদেশ। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জয়ে ২-০ ব্যবধানে ট্রফি নিশ্চিত করে স্বাগতিকরা।

শেষ ওভারে জয়ের জন্য জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিল ২০ রান। প্রথম বলে সিঙ্গেল আর দ্বিতীয় বলে ওয়াইড দেন আল-আমিন। পরের বলে ব্যাটিং তাণ্ড চালানো মুতুমবদজির উইকেট তুলে নেয়ায় ম্যাচ ঝুঁকে যায় বাংলাদেশের দিকে। শেষ ৪ বলে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিল ১৮ রান। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে জিম্বাবুয়েকে ফের জয়ের স্বপ্ন দেখান ত্রিপানো।

শেষ দুই বলে জয়ের জন্য জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৬ রান। পঞ্চম বলে ডট দেন আল-আমিন। শেষ বলে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিল ৬ রান। স্টাইকে থাকা ত্রিপানো সিঙ্গেল রানের বেশি নিতে না পারায় তীরে গিয়ে তরী ডুবে জিম্বাবুয়ের।

শেষ দুই ওভারে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিল ৩৪ রান। শফিউলের করা ৪৯তম ওভারে ১৪ রান আদায় করে নেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা। শফিউলের করা ৪৭তম ওভারে দুই ছক্কা আর একটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ২০ রান আদায় করে নেন ত্রিপানো। শেষ ১৮ বলে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিল ৪১ রান। আগের ওভারে ১৬ রান খরচ করা আল-আমিন, রান খরচে সতর্ক হওয়ায় ৪৮তম ওভারে ৭ রানের বেশি নিতে পারেনি জিম্বাবুয়ে।

জয়ের জন্য শেষ দিকে ৩০ বলে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিল ৭৭ রান। ডোনাল্ড ত্রিপানো ও টিনোটেন্ডা মুতুমবদজি রীতিমতো তাণ্ডব চালান। ৪৬তম ওভারে আল-আমিনের করা ওভারে দুই চার ও এক ছক্কায় ১৬ রান আদায় করে নেন।

৩২৩ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করতে নেমে দলীয় ১৫ রানে রেগিস চাকাভাকে সাজঘরে ফেরান শফিউল ইসলাম। ৯.৩ ওভারে ৪৪ রানে জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলরকে দুর্দান্ত থ্রোতে রান আউটের ফাঁদে ফেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

বাঁচা-মরার লড়াইয়ের ম্যাচে হাল ধরতে পারেননি অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান শেন উইলিয়ামসও। ২৪ বলে মাত্র ১৪ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন তিনি। তার বিদায়ে ৬৭ রানে প্রথম সারির ৩ ব্যাটসম্যানের উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে।

রানের পাহাড়ে চাপা পড়ে যাওয়া জিম্বাবুয়েকে খেলায় ফেরাতে চেষ্টা করছিলেন ওপেনার টিনাশে কামুনহুকামউইকে। ২৪তম ওভারে বোলিংয়ে এসেই টিনাশের উইকেট তুলে নেন তাইজুল ইসলাম। তার স্পিনে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে ৭০ বলে ৫টি চার ও দুই ছক্কায় ৫১ রান করে ফেরেন টিনাশে।

পঞ্চম উইকেটে সিকান্দার রাজার সঙ্গে ৮১ রানের জুটি গড়েন ওয়েসলে মাধেভের। আল-আমিনকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৫৬ বলে ফিফটি তুলে নেয়া মাধেভেরকে সাজঘরে ফেরান তাইজুল। তার স্পিনে বিভ্রান্ত হয়ে ফেরার আগে ৫৭ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৫২ রান করেন মাধেভের।

জয়ের জন্য শেষদিকে ৬০ বলে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিল ১১৫ রান। হাতে ছিল মাত্র ৫ উইকেট। দলের নিশ্চিত পরাজয় জেনেও দুর্দান্ত ব্যাটিং করে যান সিকান্দার রাজা। কিন্তু রান রেট বেড়ে যাওয়ার কারণে ফিফটি তুলে নেয়ার পর টপাটপ বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে মাশরাফির বলে থার্ড ম্যানে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন রাজা। ৪১.৫ ওভারে ২২৫ রানে সাজঘরে ফেরার আগে ৫৭ বলে ৫টি চার ও দুই ছক্কায় দলীয় সর্বোচ্চ ৬৬ রান করেন সিকান্দার রাজা।

এরপর অষ্টম উইকেটে ডোনাল্ড ত্রিপানোকে সঙ্গে নিয়ে ৪৯ বলে রেকর্ড ৮০ রানের জুটি গড়েন টিনোটেন্ডা মুতুমবদজি। তাদের এই জুটিতেই হেরে যাওয়া ম্যাচে জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল জিম্বাবুয়ে। কিন্তু শেষ ওভারে মুতুমবদজি আউট হওয়া আর শেষ বলে ত্রিপানো ছক্কা হাঁকাতে না পারায় তাদের স্বপ্ন বাস্তরে রুপ নেয়নি।

ম্যাচে হেরে গেলেও ৩২৩ রানের পাহাড় ডিঙাতে নেমে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা প্রত্যাশার চেয়েও ভালো ক্রিকেট খেলেছেন। ম্যাচের জয় পরাজয় যাই হোক, দর্শকদের মানোরঞ্জন করতে পেরেছেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা।

মঙ্গলবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।

প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ৩৮ রানে ফেরেন ওপনার লিটন কুমার দাস। আগের ম্যাচে ক্যারিয়ার সেরা ১২৬ রানের ইনিংস খেলা লিটন এ দিন ফেরেন ১৪ বলে মাত্র ৯ রান করে। তিন নাম্বার পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ৬ রানে আউট হন নাজমুল হোসেন শান্ত।

এরপর মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ৮৭ রানের জুটি গড়েন তামিম। ৫০ বলে ৬টি চারের সাহায্যে ৫৫ রান করে আউট হন মুশফিক। তার বিদায়ের পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সঙ্গে নিয়ে ফের ১০৬ রানের জুটি গড়েন তামিম।

এই জুটিতেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ২২তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ভিভ রিচার্ডসকে ছাড়িয়ে যান তামিম ইকবাল। শুধু রিচার্ডসকে ছাড়িয়ে যাওয়াই নয়, প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৭ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন দেশসেরা এ ওপেনার।

দুর্দান্ত ব্যাটিং করে যাওয়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ডিপ স্কায়ার লেগে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন। তার আগে ৫৭ বলে তিনটি চারের সাহায্যে করেন ৪১ রান।

ব্যাটসম্যানদের এ আসা-যাওয়ার মিছিলে ব্যতিক্রম ছিলেন তামিম ইকবাল। সবশেষ ৭ ইনিংসে প্রত্যাশিত ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ তামিম ইকবালকে নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। মঙ্গলবার মাঠে নামার আগেও তার পারফরম্যান্স ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সেই সমালোচনা জবাব ব্যাট হাতেই দিলেন দেশসেরা এ ওপেনার।

ইনিংস ওপেন করতে নামা তামিম ফেরেন ৪৫.৩ ওভারে। বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে সীমানায় ক্যাচ তুলে দেন। তার আগেই গড়েন ইতিহাস। দেশের হয়ে ব্যক্তিগত ১৫৮ রানের ইনিংস খেলে আরও একটি রেকর্ড গড়েছেন তামিম। এই ইনিংস খেলার পথে তামিম নিজেই নিজের রেকর্ড ভাঙেন।

এর আগে ২০০৯ সালে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই বুলাওয়ে স্টেডিয়ামে দেশের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৫৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তামিম। সিলেটে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে খেলেন ১৩৬ বলে ২০টি চার ও ৩ ছক্কায় ১৫৮ রানের ইনিংস। তামিমের সেঞ্চুরি আর মুশফিকুর রহিমের ফিফটির সুবাদে ৮ উইকেটে ৩২২ রানের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ। শেষদিকে মাত্র ১৮ বলে ৩২ রান করেন মোহাম্মদ মিঠুন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ: ৩২২/৮ (তামিম ১৫৮, মুশফিক ৫৫, মাহমুদউল্লাহ ৪১, মিঠুন ৩২*)।

জিম্বাবুয়ে: ৫০ ওভারে ৩১৮/৮ (সিকান্দার রাজা ৬৬,ত্রিপানো ৫৫*, মাধেভের ৫২, টিনাশে ৫১, মুতুমবদজি ৩৪)।

ফল: বাংলাদেশ ৪ রানে জয়ী।