বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, লকডাউনসহ বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির যখন উন্নতি ঘটছে, তখন আমাদের দেশে ভয়াবহ আকারে অবনতি হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যু সর্বোচ্চ পর্যায়ে। হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে কাতরাচ্ছে করোনা রোগীরা এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। চারিদিকে এতো উন্নয়নের বুলি, অথচ বাংলাদেশে একটিও আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স নেই। টেস্টের অনুপাতে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার সব দেশকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাদের সীমাহীন ব্যর্থতার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

বৃহস্পতিবার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, হিমালয় প্রমাণ ভুল সিদ্ধান্ত, অর্বাচীনতা, ব্যবসায়ী ও আমলাদের স্বার্থের কাছে নতজানুতা এবং সরকারের একটি ডিপার্টমেন্টের সাথে আরেকটি ডিপার্টমেন্টের সমন্বয়হীনতা মানুষের জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। অনির্বাচিত সরকারের কাছে জনগণের ছিটেফোঁটাও মূল্য নেই। জনগণ এখন তাদের গবেষণার গিনিপিগ। অবিবেচকের মতো সবকিছু খুলে দিয়ে এখন তামাশা দেখছে সরকার। তাদের ভাবখানা এমন- চরে খাও, বাঁচলে বাঁচো, মরলে মরো। আমরা তো গদিতে আছি আরামে।

বাস ভাড়া বৃদ্ধির সমালোচনা করে তিনি বলেন, এখন গণপরিবহনে ভাড়ার নৈরাজ্য চলছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার পরিবর্তে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া আদায় করছে বাস কোম্পানিগুলো। নিরুপায় যাত্রাপথে নির্বিচারে পকেট কাটা হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। আর কোথায় স্বাস্থ্যবিধি, কোথায় সীমিত যাত্রী? বাস তো আগের মতোই চলছে গাদাগাদি করে। বর্তমানে লঞ্চঘাট, বাস স্ট্যান্ড-টার্মিনাল এবং রাস্তাঘাটের দৃশ্য ভয়াবহ, কোথাও স্বাস্থ্যবিধির নূন্যতম বালাই নেই।

রিজভী বলেন, গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজে এই ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে বলেছেন, ‘কিছু পরিবহনের বিরুদ্ধে বাড়তি ভাড়া আদায় এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বাসে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বিআরটিএ ও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমি যাত্রীদেরকেও সচেতন থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। তা না হলে টার্মিনাল এবং বাসযাত্রা হতে পারে সংক্রমণ বিস্তারের কেন্দ্র।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, কার্যত: জনগণের জীবন নিয়ে বালখিল্য চলছে। নিজেদের দলীয় সিন্ডিকেটের পকেট ভরতে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ালেন। ঘোষণা করেছিলেন মনিটরিং করবেন। কোথায় সেই মনিটরিং-মোবাইল কোর্ট? দুর্যোগকালে এমনিতেই সাধারণ মানুষ অর্থকষ্টে রয়েছে। কাজ-কর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকানপাট সবকিছু বন্ধ থাকায় গত কয়েক মাসে তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। তার ওপর পরিবহন ভাড়ার এই অকল্পনীয় নৈরাজ্য যেন প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে মধ্য সাগরে লাইফ বোটবিহীন জাহাজের মতো। ওবায়দুল কাদের নিশ্চয় জানেন, করোনায় আক্রান্ত বিশ্বের কোনো দেশে কোথাও গণপরিবহন ভাড়া এক টাকাও বাড়েনি। এমনকি প্রতিবেশী দেশ-যাদের সাথে এই সরকারের নিবিড় সম্পর্ক তারাও ভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। অবিলম্বে বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর করার আহবান জানাচ্ছি।