বিশেষ প্রতিনিধিঃ ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিল, তা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পুনর্মূল্যায়ন করার সময় এসেছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের ভাষ্যমতে তারা ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতির বেশির ভাগই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছেনবাংলাদেশকে তারা মধ্যম-আয়ের দেশে পরিণত করতে পেরেছেন, যা ছিল নির্বাচনী ইশতেহারের অন্যতম প্রধান প্রতিশ্রুতি

তবে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি আওয়ামী লীগের ছিলনির্বাচনী ইশতেহারে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিলবলা হয়েছিল, যেকোন জাতীয় ইস্যুতে দল-মত নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক দল, শ্রেণি ও পেশাগত প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সমাজের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা হবেকিন্তু জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে একটি গ্রহনযোগ্য সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার দাবি করা হলেও ক্ষমতাসীন দল এ ব্যাপারে নিশ্চুপ

আওয়ামী লীগের গতবারের নির্বাচনী ইশতেহারের দিকে একবার নজর বুলিয়ে নিলে তাদের সফলতার ঝুড়ি কতটা সমৃদ্ধ সেটা যেমন অনুধাবন করা সম্ভব, ঠিক তেমনি তাদের আগামী নির্বাচনী ইশতেহারের বিশ্বাসযোগ্যতাকেও মূল্যায়ন করা যাবে কিছুটা

'শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ' শিরোনামে রচিত হয়েছিল আওয়ামী লীগের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারনির্বাচনের মাত্র ৮ দিন আগে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এই ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর, বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা এবং বিচার বানচালের ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িতদেরও বিচার এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও প্রচার নিষিদ্ধ করার অঙ্গীকার সন্নিবেশিত ছিল ইশতেহারেএছাড়া ইশতেহারে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় যমুনা ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, ফোর-জি চালু, দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা-দক্ষতা বাড়িয়ে এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি, প্রতি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু, প্রতি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্থরের শিক্ষকদের পৃথক বেতন স্কেল ও স্থায়ী বেতন কমিশন গঠন, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার অব্যাহত রাখা, তিনস্তর বিশিষ্ট স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখারও অঙ্গীকার করেছিল আওয়ামী লীগ

প্রতিশ্রুতির মূল্যায়নে গেলে দেখা যায়, উন্নয়ন সমৃদ্ধির প্রশ্নে আওয়ামী লীগ নিঃসন্দেহে সফল হয়েছে উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাঁদের প্রতিশ্রুতি ছিল ২০২১ সালের মধ্যে জনগণের মাথাপিছু আয় ১৫০০ মার্কিন ডলারে নিয়ে যাওয়াআওয়ামী লীগ নেতাদের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে গড়ে মাথাপিছু আয় ১৭৫৪ মার্কিন ডলারঅর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই আওয়ামী লীগ এই প্রতিশ্রুতিটি পূরণ করে ফেলেছে

দেশের প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগ সফলবর্তমানে প্রবৃদ্ধির হার ৭.৬৫সম্প্রতি পরিকল্পনামন্ত্রী এ এইচ এম মুস্তফা কামাল বলেন, চলতি অর্থবছরে নির্ধারিত প্রবৃদ্ধির হার ৭.৬৫% কে অতিক্রম করে তা ৮.২৫ শতাংশে পৌছাবে

আবার বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বর্তমান সরকারের সফলতা দৃষ্টিগ্রাহ্যবাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বর্তমানে ১৬ হাজার মেগাওয়াট

আওয়ামী লীগ প্রশংসনীয় সফলতা দেখিয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রেতারা ইতোমধ্যে প্রধান প্রধান আসামীদের বিরুদ্ধে রায় দিতে ও তা কার্যকর করতে সক্ষম হয়েছে

ইশতেহার মূল্যায়নে আওয়ামী লীগ সরকার জনগনকে একবারে আশাহত করেনি। তবে এ কথার যথার্থতা নিরুপণ হবে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জনগনের প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে। আওয়ামী লীগ সরকার জনগনকে কতটা সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে তা একটি সু্ষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই বলে দেবে।