অতুল হাসান

দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া এখন কারাগারে রয়েছেন, অপরদিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও সাজা মাথায় নিয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। দলের শীর্ষ দুই কান্ডারীর অনুপস্থিতে বিএনপি পরবর্তী পদক্ষেপ বা জাতীয় নির্বাচনে তাদের নের্তৃত্ব দিতে বিকল্প হিসেবে উঠে এসেছে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের নাম।

দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতার ভাষ্যমতে এই পরিস্থিতিতে বিএনপির রিজার্ভ বেঞ্চে' বিকল্প হিসেবে তাকে রাখা হয়েছে। বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা নির্বাচনী মাঠে নামতে না পারলে, জোবাইদা নির্বাচনী মাঠে লড়বেন।

বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, ‘মিথ্যা মামলায়অভিযুক্ত করে সরকার বিএনপির জনপ্রিয় নেতাদেরনির্বাচন করতে না দেওয়ার চক্রান্ত শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে।

বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা বলেছেন, জোবাইদা রহমানের রাজনীতিতে আসা নির্ভর করছে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর। অন্তত দলের ক্রান্তিকাল না হলে এই সম্ভাবনা নেই। তবে সেই ধরনের পরিস্থিতি হলে জিয়া পরিবার ও দলের ঐক্য ধরে রাখতে জোবাইদা রহমানের বিকল্প নেই।

নেতা-কর্মীদের মাঝে জোবাইদা রহমানের ভালো ইমেজ রয়েছে। তার বাবা নৌবাহিনীর প্রাক্তন প্রধান মাহবুব আলী খানও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। রাজনৈতিক পরিবারের মেয়ে ও বউ হওয়ায় নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ তাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবে বলে নেতা-কর্মীদের বিশ্বাস। তা ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও সাধারণ গৃহিণী থেকে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। জোবাইদা রহমানও পারবেন।

এক-এগারোর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার হওয়া তারেক রহমান ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে মুক্তির পর স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান। এরপর থেকে জোবাইদা লন্ডনেই অবস্থান করছেন।

স্বামীর সঙ্গে লন্ডন যাওয়ার সময় সরকারি চাকুরে জোবাইদা শিক্ষা ছুটি নিয়েছিলেন। পরে তা বাড়িয়ে ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়। লন্ডন যাওয়ার পর কয়েক দফায় ছুটি বাড়ান জোবাইদা। তবে তার সর্বশেষ আবেদন আর গ্রহণ করেনি মন্ত্রণালয়।

প্রায় ছয় বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় ২০১৪ সালে তাকে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণের অনিশ্চয়তা মধ্যে ভেতরে ভেতরে আলোচনা জোবাইদা রহমান। দলের কেউ কেউ বলছেন, পরিস্থিতির বিবেচনায় বগুড়া-৬ (সদর) থেকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। কারণ এই আসনটি জিয়া পরিবারের জন্য সংরক্ষিত আসন হিসেবে পরিচিত।

১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া সিলেটে পৈতিক নিবাস থেকেও নির্বাচন করার সুযোগ রয়েছে। জোবাইদা রহমানের রাজনীতিতে আসার বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান বলেন, ‘জোবাইদা রহমান শিক্ষিত, বড় বংশের সন্তান এবং সর্বোপরি তার শ্বশুর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, শাশুড়ি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তার স্বামী দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। বর্তমানে তিনি আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

সুতরাং জোবাইদা রহমান রাজনীতিতে এলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে এটি তাদের পারিবারিক সিদ্ধান্তের বিষয়। তিনি বলেন, 'আমাদের বলার কিছু নেই। অপেক্ষা করতে হবে তিনি রাজনীতিতে আসবেন কি আসবেন না। তবে রাজনীতিতে আসার জন্য মেধা, শিক্ষাসহ সব ধরনের যোগ্যতাই তার আছে।

দলটির সিনিয়র নেতারা বলছেন, তারা খালেদা জিয়াকে নিয়েই নির্বাচনে যাবে বিএনপি। এখনও তারা বিকল্প কিছু ভাবছেন না। তবে জোবাইদা রাজনীতিতে আসলে ইতিবাচকভাবেই নিবেন তারা।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্ঠা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, জোবাইদা রহমানের রাজনীতিতে আসা নিয়ে অনেক দিন ধরেই আলোচনা চলছে। যোগ্যতা সম্পুন্ন মানুষ, রাজনীতিতে আসলে ভালই হবে। তিনি বগুড়া থেকে নির্বাচন করতে পারবেন। তাছাড়া সিলেট থেকেও নির্বাচন করতে পারবেন।

তিনি বলেন, তাকে নিয়ে আলোচনার কারণ হচ্ছে, নির্বাচনের আগে তারেক রহমাম দেশে আসতে পারছেন না। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে সাজানো মামলায় কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। যা আমরা ন্যায় সংগত মনে করি না তাই আন্দোলন করছি। তিনি আরও বলেন, আসল কথা হচ্ছে বিএনপি খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাব না। সেখানে জোবাইদা নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগই নেই।

তবে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরারফাত রহমান মৃত্যুর পরে কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলী রহমান এই মুহুর্তে তারেক রহমানের পরিবারের সাথে লন্ডনে অবস্থান করছেন। কোকো মারা যাবার পর শর্মিলী রহমান তাদের সন্তান নিয়ে লন্ডনে পাড়ি জমান।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীরা বিশ্বাস করেন, জিয়া পরিবারের রাজনীতির নতুন দিক উন্মোচনের জন্য এই খালেদা জিয়ার দুই পুত্রবধুর আগমন জরুরী।

তবে কোকো রহমানের স্ত্রীকে নিয়ে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কোন নেতার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলাগুলোর মধ্যে চারটি সেনাসমর্থিত ২০০৭ সালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা। বাকি দুর্নীতির মামলাসহ অপরগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়ের করা।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে খালেদা জিয়া। এছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা, বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলা ও নাইকো দুর্নীতি মামলাও চলমান। এ ছাড়া দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও ১৩০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টিতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তারেকের স্ত্রী জোবাইদা রহমানও স্বামীর সঙ্গে দুদকের একটি মামলার আসামি। খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মৃত আরাফাত রহমান কোকোও সাতটি মামলার আসামি ছিলেন।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা থেকে উদ্ভূত দুই মামলা, এনবিআরের করা কর ফাঁকির এক মামলা, রাষ্ট্রদ্রোহের এক মামলা ও মানহানির দুই মামলা রয়েছে এর মধ্যে। মানহানির একটি মামলায় লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। এরই মধ্যে অর্থ পাচারের এক মামলায় তারেক রহমানকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ও জরিমানা করা হয়েছে।

বিডিপ/সৌ